বাবার শেষ চিঠি
কবি- রশিদ হারুন
হাতে একটা চিঠি,
রেজিস্ট্রি করা চিঠি,
বাবার পাঠানো চিঠি।আমি বিশ্বিদ্যালয়ের হলে থাকি,
যেদিন বাবা আমাকে চিঠিটা লিখে পোষ্ট করেছিলো,
সেদিন রাতে হঠাৎ করেই বাবা ঘুমের মধ্যেই মরে যায়,
কাউকে বিরক্ত না করেই মরে যায়,
ডাক্তার বলেছিলো,বাবার বুকটা নাকি
ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ করে থেমে গিয়েছিলো।
বাবা সব সময়ই রেজিস্ট্রি করা চিঠি পাঠাতো,
উনার কেনো যে ধারনা হয়েছিলো
রেজিস্ট্রি না করলে চিঠি হারিয়ে যায়।
মা’র সাথে শোক ভাগাভাগি করে
কয়েকদিন পর আবার যখন হোষ্টেলে ফিরবো
তখন মা বাবার এই চিঠিটার কথা জানায়।চিঠিটা খুলবো কিনা বুজতে পারছিলাম না,
মনে হচ্ছিলো চিঠির খামটা খুললেই
বাবার শেষ কথা গুলো শেষ হয়ে যাবে,
তারপর অনেকদিন চিঠির খামটা খুলিনি,
মাথার বালিশের নিচে নিয়ে ঘুমাতাম,
মনে হতো বাবার বুকেই শুয়ে আছি।
একদিন রুমমেট শাহেদ বললো,
“চিঠিটা, খুলে পড়ে ফেলিস,
ওখানে তোর বাবার শেষ কথাগুলো
আটকে আছে তোর জন্য,
না বলতে পেরে, উনি বোধহয় কষ্ট পাচ্ছেন”।
আমি আর দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে
চিঠির খামটা খুলে ফেললাম।
বাবা সব সময় যে ভাবে শুরু করতো
চিঠিটা শুরু হয়েছে সেই ভাবেই,
“ ভালো আছো তো,
আমরা ভালো,
কিছু দরকার হলে , আমাকে বলতে না পারলে
তোমার মা’কে বলবে”।
আমার আর পড়া হলোনা বাকীটুকু,
হঠাৎ হোষ্টেল কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম
“বাবা আমার এখন তোমাকেই দরকার”,
শাহেদ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আরো জোরে চিৎকার করে বল,”
আমি বুকের সমস্ত শক্তি দিয়ে কেঁদে বললাম.
“বাবা আমার এখন তোমাকেই দরকার”।
-সমাপ্ত-